কোন খাদ্যর কি ভূমিকা এবং দেহে তাদের কাজ

 

আপনি কি জানেন আপনার দেহের কোন খাদ্য কিভাবে কাজ করে? কিংবা কোন খাদ্যর কি ভূমিকা ?  মূলত  আমরা যে সব  আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে।

কিন্তু সব আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে পুষ্টি সহায়ক নয়। সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। কারন জীবদেহে শক্তির উৎস হল খাদ্য।  আর এই  খাদ্য জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়। জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া যেমন- শ্বসন , রেচন ,পুষ্টি ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। যে কারনে  প্রতিটি জীবের জীবন ধারনের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই যেসকল আহার্য সামগ্রী গ্রহন করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয়পূরন হয়, তাকেই খাদ্য বলে।


দৈনিক গড় ক্যালরি গ্রহণ খাদ্যের প্রকারভেদ জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু’ভাগে ভাগ করা হয় –

 ১ দেহ-পরিপোষক খাদ্য – 

যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কার তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন – শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।

২ দেহ-সংরক্ষক খাদ্য –

যে সব খাদ্য দেহ রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা কর শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারালস।

  খাদ্যে ছ’টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা , প্রোটিন , স্নেহপদার্থ , খাদ্যপ্রাণ , খনিজ লব এবং জল।

 শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট –  উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন —এই তিনটি উপাদান নিয়ে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট গঠিত। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত Cn (H 2O) n ; যেমন গ্লুকোজ C6 H12 O6 , সুক্রোজ C 12 H 22O11 ইত্যাদি। উৎস : ধান বা চাল, গম , ভূট্টা, বাজরা, আলু , ওল, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদিতে স্বেতসার বা স্টার্চ; খেজুর , আঙ্গুর , আপেল ইত্যাদিতে দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ; শাক-সবজি, বেল, তরমুজ, থোড় ইত্যাদিতে সেলুলোজ; আম , কলা , কমলালেবু প্রর্ভতি পাকা ফলে ফলশর্করা বা ফুক্টোজ; চিনি , গুড়, মিছরী ইত্যাদিতে ইক্ষুশর্করা বা সুক্রোজ; দুধে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাক্টোজ এবং পাঁঠার যকৃৎ ও পেশীতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার পাওয়া যায়। শ্রেণীবিভাগ : কার্বোহাইড্রেটের প্রত্যেক অণুতে সরল শর্করার এক বা একাধিক এককের উপস্থিতি অনুসারে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ছে।

যথা : ১. মনোস্যাকারাইড :যেসব শর্করা একটি মাত্র অণু দ্বারা গঠিত, তাকে মনোস্যাকারাইড বলে। যথা: গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও গ্যালাকটোজ।

 ডাইস্যাকারাইড  – যেসব শর্করা দুটি অণু দ্বারা গঠিত, তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন: সুক্রোজ, ল্যাকটোজ ও মলটোজ। ৩. পলিস্যাকারাইড :যেসব শর্করা অনেক অণু দ্বারা গঠিত, তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন: স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও সেলুলোজ। পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ : দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন শর্করার প্রধান কাজ। সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশীতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরি হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ হল প্রতি ১০০ মিলি. রক্তে ৮০-১২০ গ্রাম। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ না করেও শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ বেঁচে থাকতে পারে। এই জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য বলে

 আমিষ বা প্রোটিন –  উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন সমন্বয়ে প্রোটিন গঠিত। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উৎস : মাছ , মাংস, ডিম, দুধ, ছানা ইত্যাদিতে প্রাণিজ প্রোটিন এবং ডাল, সয়াবিন , বীন, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রানিজ প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সব গুলিই থাকে বলে প্রাণিজ প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বালা হয়। শ্রেণীবিভাগ : প্রোটিনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা: ১. সরল প্রোটিন :যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। যথা: অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি সরল প্রোটিনের উদাহরণ।

২. সংযুক্ত প্রোটিন :সরল প্রোটিন যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যথা: হিমোগ্লোবিন, হিমোসায়ানিন, ফসফোপ্রোটিন, লাইপোপ্রোটিন ইত্যাদি।

৩. লব্ধ প্রোটিন :যে সব প্রোটিন পরিপাক নালীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের সময় উদ্ভূত হয়, তাদের লব্ধ প্রোটিন বলে। যথা: পেপটন, পেপটাইড ইত্যাদি।

কোন খাদ্যর কি ভূমিকা –

দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ হল প্রোটিনের প্রধান কাজ। তাপ শক্তি উৎপাদন। দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি কর অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদ পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম প্রোটিন অণু দহন হলে ৪.১ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন।

স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট : উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। এখন অক্সিজেন অনুপাত শর্করা তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ। উৎস : বাদাম, নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রানিজ ফ্যাট থাকে।



Comments

Popular posts from this blog

হাজীগঞ্জ উপজেলা/Haziganj

বাংলাদেশের কবুতরের জাত ও দাম

কবুতর পালনের আধুনিক কলাকৌশল