কবুতরের বাসস্থান

কবুতরের বাসস্থান


আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্ণিশে মাটির হাড়ি অথবা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতর পালা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলে, কয়েক জোড়া কবুতরের ঘর করে এক জোড়া কবুতর পালন করলে কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ঘরগুলোতে নতুন জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধে। কবুতর পোষা খুব সহজ এবং লাভজনক তা বলাই বাহুল্য। অল্প-পরিসরে যা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য অবশ্যই সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। নিম্নে কবুতরের ঘর বা খোপ তৈরির বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো।

স্থান নির্বাচনঃ কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।
ঘরের উচ্চতাঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজী ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগালে না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর উঁচু করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে কাঠ বা বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।
ঘরের পরিসরঃ প্রতি এক জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন। এক জোড়া কবুতর যাতে ঘরের ভিতর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাঃ কবুতরের ঘর বা খোপ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন সেখানে পোকা-মাকড়, কৃমি, জীবাণু ইত্যাদির উপদ্রব কম থাকে এবং ঘর সহজেই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা যায়।
সূর্যালোকঃ ঘরে যাতে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলো যেমন পাখির দেহে ভিটামিন-ডি সৃষ্টিতে সাহায্যে করে তেমনি পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখে।
বায়ু চলাচলঃ কবুতরের ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ দূষিত বাতাস বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।
কবুতর পালার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গার প্রয়োজন নেই। বাড়ির আঙিনায়, বাসার ছাদ বা জানালার কার্নিশে কবুতর পালন করা যায়। নিচে কবুতরের বাসস্থানের বর্ণনা দেয়া হলো :
হালকা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের ঘর বসাতে হবে।
কবুতরের থাকার ঘরটি এমনভাবে উঁচু করে তৈরি করতে হবে যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে।
ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
খাবার ও পানির পাত্র কবুতরের ঘরের কাছেই রাখতে হবে।
কবুতরের ঘর পরিষ্কার এবং শুকনা রাখতে হবে।
প্রতিমাসে একবার, দু’বার করে কবুতরের ঘরের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হবে।


ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি যাতে কবুতরকে খেয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন উঁচু ও শক্ত ঘর। হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায় সহজেই। প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘর হলেই চলে। একই সঙ্গে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এত খরচ বাঁচে।

এক বর্গফুট মাপের ঘরের সামনে ৫/৬ ইঞ্চির বারান্দা অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে কবুতর সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি।

ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে ঘর পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডিম পাড়ার সময় যাতে সহজেই খড় সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য কবুতরের ঘরের আশপাশে খড় রেখে দিতে হয়। ঘর রাখতে হবে সবসময় শুকনো।

Comments

Popular posts from this blog

হাজীগঞ্জ উপজেলা/Haziganj

বাংলাদেশের কবুতরের জাত ও দাম

কবুতর পালনের আধুনিক কলাকৌশল